আজ শুক্রবার, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিল চালু হলে অবসায়নকৃত শ্রমিকরা অগ্রাধিকার পাবে: মন্ত্রী গাজী

বিজেএমসি’র ক্রমবর্ধমান লোকসানের কারণে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় অবসায়নের মাধ্যমে মিলগুলিকে বর্তমান দেশিয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ -১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক । 

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)এর কার্যক্রম পর্যালোচনা বিষয়ে ব্রিফিং তিনি এ কথা বলেন। সভায় বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম,এনডিসি  এ সময় উপস্থিত ছিলেন। আজ রবিবার অনলাইনে এ ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয় ।

মন্ত্রী জানান, ২০১৪ সাল হতে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের (৮,৯৫৪ জন) প্রাপ্য সকল বকেয়া, বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের (২৪,৮৮৬ জন) প্রাপ্য বকেয়া মজুরি, শ্রমিকদের পিএফ জমা, গ্র্যাচুইটি এবং সে সাথে গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ ২৭% হারে অবসায়ন সুবিধা একসাথে শতভাগ পরিশোধ করা হবে। এজন্য সরকারি বাজেট হতে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা প্রদান করা হবে। অবসায়নের পর মিলগুলি সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি/যৌথ উদ্যোগ/জি টু জি/ লীজ মডেলে পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হবে। নতুন মডেলে পুন:চালুকৃত মিলে অবসায়নকৃত বর্তমান শ্রমিকেরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ পাবে। একই সাথে এসব মিলে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বেসরকারি খাতে মাসিক মূল মজুরি ২৭০০ টাকার বিপরীতে উৎপাদনশীলতা ও মজুরি কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নের পর বিজেএমসি’র পাটকলসমূহে তা ৮৩০০ টাকার উন্নীত হয়েছে। ফলে সরকারি মিলে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচে মজুরির অংশ  ৬০%-৬৩%, যা বেসরকারি খাতের প্রায় তিনগুণ।

উৎপাদন খরচ অস্বাভাবিক বেশি হওয়ায় বাজারে টিকে থাকার জন্য বিজেএমসিকে হ্রাসকৃত দরে পণ্য বিক্রয় করতে হয়। এতে করে পাটখাতে সার্বিক প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ/ বিনষ্ট হয় এবং বেসরকারি খাতের মিলগুলো উৎপাদিন পণ্যের দর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এটি পাটখাতের সামগ্রিক ভারসাম্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নস্যাৎ করছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয়ের প্রতিক্রিয়ায় অন্যতম প্রধান বাজার ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশ হতে পাটপণ্য আমদানিতে এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। এতে কেবল বিজেএমসিই নয়, বেসরকারি খাতের রপ্তানিকারকেরাও বিপাকে পড়েছে।

বর্তমানে পাটপণ্য উৎপাদনে বিজেএমসি’র অবদান মাত্র ৮.২১% রপ্তানিতে এ হার আরও কম ৪.৪৫%। নামমাত্র উৎপাদন ও অনুল্লেখ্য রাপ্তানির জন্য সরকারি বাজেট হতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকী দিয়ে মিলগুলোর কার্যক্রম বর্তমান কাঠামোতে অব্যাহত রাখা অর্থনৈতিক নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।

পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্যের অতি ব্যবহারের দরুণ বিশ্বব্যাপি সৃস্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে বিশ্ব জুড়ে পাটসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক তন্তুর কদর সম্প্রতি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ পরিষদে দ্বিতীয় কমিটিতে ‘প্রাকৃতিক তন্তুর উদ্ভিজ্জ ও টেকসই উন্নয়ন’ শিরোনামে পাটসহ প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বিষয়ক একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে পাটের কদর ও ব্যবহারিক মূল্য বৃদ্ধির একটি সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি গত ২ দশকে বিশ্ব জুড়ে পাটের তৈরী নানাবিধ ও বহুমুখী পণ্যের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কিন্তু বহুমুখী পাটপণ্যের উপযোগি কাঁচামাল তৈরির উৎপাদনের ক্ষমতা বিজেএমসি’র পাটকলসমূহের নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে বহুমূখী পাটপণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এ খাতে রপ্তানি ২৩.৪৯% বৃদ্ধি পায়। করোনাভাইরাসজনিত সংকটের কারণে প্রবৃদ্ধির এই ধারা গত ২   মাসে শ্লথ হয়ে আসায় মে ২০২০  পর্যন্ত অন্যান্য সকল খাতে ঋণাত্নক প্রবৃদ্ধির বিপরীতে এ খাতে ৫.৭৪% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং ১১ মাসে রপ্তানির পরিমাণ (৮১৭.৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) গত অর্থবছরের সার্বিক পরিমাণ (৮১৬.২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়িয়ে গেছে।প্রায় ৬০/৭০ বছর পূর্বের যন্ত্রপাতি দিয়ে স্থাপিত এসব মিলের কার্যক্ষমতা সময়ের ব্যবধানে হ্রাস পেয়ে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে। তাছাড়া, বিজেএমসি’র পুরনো ব্যবস্থাপনা কাঠামো অধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার উপযোগি নয়। 

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ